স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা আমাদের অস্থির করে তোলে। একটু সচেতনভাবে ফোন ব্যবহার করলে এবং কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে আপনার ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারবেন। আসুন, জেনে নিই সেই কার্যকর উপায়গুলো:
১. চার্জিংয়ের সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলুন
ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর জন্য চার্জিংয়ের সঠিক অভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ২০% থেকে ৮০% নিয়ম মেনে চলুন: বেশিরভাগ ব্যাটারি বিশেষজ্ঞেরা পরামর্শ দেন, আপনার ফোনের ব্যাটারি ২০% এর নিচে নামার আগে চার্জে দিন এবং ৮০%-এর বেশি চার্জ করবেন না। এতে ব্যাটারির ওপর চাপ কম পড়ে এবং এর আয়ু বাড়ে। মাসে একবার ০% থেকে ১০০% চার্জ করতে পারেন, এটি ব্যাটারি ক্যালিব্রেশনে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত চার্জ এড়িয়ে চলুন: রাতভর ফোন চার্জে দিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকুন। ১০০% চার্জ হয়ে গেলে চার্জার খুলে ফেলুন। এতে ব্যাটারির ওপর অপ্রয়োজনীয় চাপ কমে।
- সঠিক চার্জার ব্যবহার করুন: আপনার ফোনের সাথে আসা আসল বা বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের চার্জার ব্যবহার করুন। নিম্নমানের চার্জার ব্যাটারির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
- গরম অবস্থায় চার্জ নয়: ফোন গরম থাকা অবস্থায় চার্জ করা থেকে বিরত থাকুন। উচ্চ তাপমাত্রা ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।
২. ডিসপ্লে সেটিংস অপটিমাইজ করুন
ফোনের ডিসপ্লে সবচেয়ে বেশি ব্যাটারি খরচ করে। তাই ডিসপ্লে সেটিংস পরিবর্তন করে আপনি অনেক ব্যাটারি সাশ্রয় করতে পারেন।
- উজ্জ্বলতা কমান: ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা যতটা সম্ভব কম রাখুন। অটো-ব্রাইটনেস ফিচারটি বন্ধ করে ম্যানুয়ালি উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করুন, কারণ এটি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
- ডার্ক মোড ব্যবহার করুন: আপনার ফোনে যদি OLED বা AMOLED ডিসপ্লে থাকে, তাহলে ডার্ক মোড (Dark Mode) ব্যবহার করুন। এটি কালো পিক্সেলগুলোকে সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে ব্যাটারি সাশ্রয় করে।
- স্ক্রিন টাইমআউট কম রাখুন: স্ক্রিন চালু থাকার সময় কমিয়ে দিন। ৩০ সেকেন্ড বা ১ মিনিটে স্ক্রিন বন্ধ হওয়ার সেটিং রাখুন।
৩. অপ্রয়োজনীয় ফিচার ও অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
অনেক ফিচার ও অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে গিয়ে আপনার অজান্তেই ব্যাটারি শেষ করে দেয়।
- লোকেশন সার্ভিস, ব্লুটুথ, ওয়াইফাই: যখন প্রয়োজন নেই, তখন লোকেশন সার্ভিস (GPS), ব্লুটুথ (Bluetooth) এবং ওয়াইফাই (Wi-Fi) বন্ধ রাখুন। এগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে সক্রিয় থাকলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়।
- ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করুন: অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা ব্যবহার করে ও ব্যাটারি খরচ করে। কাজ শেষ হলে অ্যাপগুলো বন্ধ করে দিন বা সেটিংসে গিয়ে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ’ অপশনটি বন্ধ করুন।
- নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ: যে অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন আপনার প্রয়োজন নেই, সেগুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন।
- ভাইব্রেশন বন্ধ রাখুন: কীবোর্ড টাইপিং বা অন্যান্য ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ভাইব্রেশন (Vibration) বন্ধ রাখলে ব্যাটারি সাশ্রয় হয়।
- লাইভ ওয়ালপেপার এড়িয়ে চলুন: অ্যানিমেটেড বা লাইভ ওয়ালপেপার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো ব্যাটারির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে।
৪. পাওয়ার সেভিং মোড ও সফটওয়্যার আপডেট
স্মার্টফোনে থাকা কিছু ফিচার ব্যাটারি সাশ্রয়ে দারুণ কাজ করে।
- পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার করুন: প্রায় সব স্মার্টফোনেই ব্যাটারি সেভার বা লো-পাওয়ার মোড থাকে। ব্যাটারি কম থাকলে বা দীর্ঘ সময় ব্যাকআপের প্রয়োজন হলে এটি চালু করুন। এটি ফোনের কর্মক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে ব্যাটারি সাশ্রয় করে।
- সফটওয়্যার আপডেট রাখুন: নিয়মিত আপনার ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করুন। আপডেটগুলোতে প্রায়শই ব্যাটারি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং বাগ ফিক্স থাকে, যা ব্যাটারি লাইফ উন্নত করতে সাহায্য করে।
এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশ ১০ জুলাই
৫. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
ব্যাটারির স্বাস্থ্যের জন্য তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
- ফোনকে ঠান্ডা রাখুন: আপনার ফোনকে অতিরিক্ত গরম হতে দেবেন না। সরাসরি সূর্যের আলোতে বা তাপ উৎপন্নকারী ডিভাইসের কাছে রাখবেন না। অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম উভয়ই ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।
- কেস খুলে চার্জ দিন: গরমকালে বা ফোন ব্যবহারের সময় যদি এটি অতিরিক্ত গরম হয়, তাহলে হার্ড কেস খুলে চার্জ দিন। এতে ফোন দ্রুত ঠান্ডা হতে পারে।
এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনার ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে এবং ব্যাটারির আয়ুও দীর্ঘস্থায়ী হবে।