মাথা ব্যথার কারণ প্রতিকার | মাথা ব্যথার কারণ কি – মাথা ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও তা ক্ষেত্র বিশেষ বেশ যন্ত্রণাদায়ক। প্রত্যেকে জীবনের কোন না কোন সময় মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হন । নানা কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে । যারা বেশি পরিমান মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন তাদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যাটা বেশি, এর পরিমান প্রায় ৫০ শতাংশ । এই মাথা ব্যথার অন্যতম কারন হলো টেনশন জনিত মাথা ব্যথা ।
মাথা ব্যথার সাধারন কিছু কারণ হলো- দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিকচাপ, সর্দিকাশি, ভাইরাসের আক্রমণ, ক্লান্তি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, সাইনোসাইটিস, ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মাথায় আঘাত, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ও ক্লাস্টার মাথা ব্যথা, ব্রেইন টিউমার ও ইনফেকশন (যেমন- মেনিনজাইটিস) ইত্যাদি ।
এছাড়াও চোখের, দাঁতের এবং নাক-কানের রোগ মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ । অনেক সময় চিকিৎসকরা মাথা ব্যথার কোনো কারণ খুঁজে পান না, তাই মাথা ব্যথা শুধু রোগীদেরই না, তা ক্ষেত্র বিশেষ চিকিৎসকদের জন্য ও মাথা ব্যথার কারণ । আজকের ব্লগ পোস্টে “মাথা ব্যথার কারণ প্রতিকার | মাথা ব্যথার কারণ কি” আলোচনা করা হলো ।
মাথা ব্যথার ধরন
কারণ অনুযায়ী মাথা ব্যথার প্রতিকার ভিন্ন ভিন্ন । সর্দিকাশি, ভাইরাসের জ্বরের সাথে অন্য কোনো ইনফেকশন চিকিৎসা দিলেই মাথা ব্যাথা ভালো হয়ে যায় । যারা অনেক দিন যাবত মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন, তাদের একজন ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে উচ্চ রক্তচাপ, চোখ, দাঁত, কান-নাক-গলা ইত্যাদির সমস্যা আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করানো উচিত । মাথা ব্যথার অবস্থা ভেদে কয়েক ধরনের হয়ে থাকে, যেমন —
- টেনশন জনিত মাথা ব্যথা
- মাইগ্রেন জনিত মাথা ব্যথা
- ক্লাস্টার মাথা ব্যথা
- সাইনাস জনিত মাথা ব্যথা
- হরমোনাল মাথা ব্যথা
- যৌন কারন জনিত মাথা ব্যথা
- অন্যান্য কারন জনিত মাথা ব্যথা ।
আগে বলেছি কারণ অনুযায়ী মাথা ব্যথার প্রতিকার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে । নিচে বিভিন্ন মাথা ব্যথার কারন ও বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । এর মধ্য থেকে জেনে নিন আপনার মাথা ব্যথার সমস্যার সমধান ।
টেনশন জনিত মাথা ব্যথা
বেশির ভাগ মাথা ব্যথাই হয় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে । মানসিক চাপ জনিত মাথা ব্যথা হলে মনে হয় মাথার তালুতে কিছু একটা চেপে ধরে আছে । সারা দিনের কাজের শেষে মাথা ব্যাথার তীব্রতা বাড়তেই থাকে । তবে ব্যস্ততার মধ্যে থাকলে ব্যথাটা একটু কম অনুভুত হয় ।
সেক্ষেত্রে সুশৃংখল পারিবারিক জীবনাচরণ ও আনন্দময় ঝামেলাহীন জীবনই পারে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে । প্রয়োজনে মনোরোগ অথবা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া যেতে পারে । কারণ ব্যাথার ঔষধে এ যন্ত্রণা উপশম হয় না বরং বেশি বেশি ব্যথানাশক ঔষধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ।
মাইগ্রেন জনিত মাথা ব্যথা
এ ধরনের ব্যথা মাথার একপাশে হয়, বমি বমি ভাব হয় । এই ব্যথা শুরু হলে তা কয়েক ঘন্টা, এমন কি কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে । আলোতে মাথা ব্যাথার তীব্রতা বাড়ে, রোগী অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে । কোন কোন রোগীর মাইগ্রেন ব্যথা শুরু হওয়ার আগে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা দেয় ।
চোখের সামনে আঁকা-বাঁকা রেখা দেখা বাঝাপসা দেখা, কথা বলতে অসুবিধা কিংবা শরীরের কোন অংশ ঝিন ঝিন করা বা অবশ লাগা । এই ধরণের রোগীদের চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপ এর মাধ্যমে মাইগ্রেন এর চিকিৎসা করা উচিত ।
কারো কারো ক্ষেত্রে চকলেট, পনির বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে, তারা নির্দিষ্ট ওই উপাদানটি এড়িয়ে চলুন । পাশাপাশি মেডিটেশন, নিদৃষ্ট সময় ঘুমানো, অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা, কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা, উচ্চ শব্দও কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ পরিহার করা, পিসি টিভি এর সামনে বেশিক্ষণ না থাকা, প্রচুর পানি পান করা ইত্যাদি মাইগ্রেনে বেশ উপকারী ।
ক্লাস্টার মাথা ব্যথা
হঠাৎ করেই শুরু হয়, তবে আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বাড়ে । ব্যথা একপাশে শুরু হয়ে সাধারণত চোখের পেছনের দিকে তীব্র আকার ধারণ করে । আক্রান্ত পাশের চোখ লালবর্ণও ধারণ করা, চোখ থেকে পানি পড়া অথবা আক্রান্ত চোখের পাতা ঢলে পড়া এবং নাক বন্ধ ও নাক থেকে পানি ঝরা এ ধরনের মাথা ব্যথার প্রধান লক্ষণ ।
২৪ ঘন্টায় ঘন ঘন আক্রান্ত হলেও রাতে সাধারণত বেশি হয়, এমনকি ব্যথার তীব্রতায় রোগী ঘুম থেকে জেগেও ঠেন । অ্যালকোহল ও ধূমপান ত্যাগ করা, সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস ইত্যাদি এসব সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে । আর রোগীকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।
সাইনাস জনিত মাথা ব্যথা
কপালে বা গালের দুই দিকে কিংবা চোখের পেছনে হয়, নাকে পানি, হাঁচি, নাক বন্ধ ও জ্বর বোধ হয় । পি এন এস এক্সরে করলে সহজেই ডায়াগনোসিস করা যায় । এ জাতীয় মাথা ব্যথায় গরম পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা গামলায় গরম পানির বাষ্প বা ম্যানথল টেনে নিলে আরাম পাওয়া যায় ।
হরমোনাল মাথা ব্যথা
মহিলাদের ঋতুকাল, গর্ভধারণ এবং মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রা পরিবর্তন হয় । তখন মন- মেজাজ পরিবর্তন এমনকি মাথা ব্যথাও হতে পারে । জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধসেবনের ফলেও মাথা ব্যথা বাড়তে পারে । এইধরনের সমস্যায় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে । এছাড়াও দুশ্চিন্তা মুক্ত দৈনন্দিন জীবন নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত ঘুম ও পানি পান ইত্যাদি বেশ সহায়ক ।
যৌন কারন জনিত মাথা ব্যথা
স্বামী-স্ত্রী যখন যৌন মিলনে মিলিত হন তখন মাথা ব্যথা হতে পারে । এই মাথা ব্যথাকে সেক্সুয়াল হেডেক বা যৌন কারন জনিত মাথা ব্যথা বলা হয়ে থাকে । সাধারণত মিলনের সময় ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং এর ফলে অনেকের মাথা ব্যথা হতে পারে । এই ব্যথা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না । মিলনের পরপরই তা সেরে যায় । যাদের এই মাথা দির্ঘ্য স্থায়ী হয় তারা অবশ্যই একজন ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন ।
অন্যান্য কারন জনিত মাথা ব্যথা
যারা উচ্চ রক্ত চাপে ভুগে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে । মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্কের রোগেও মাথা ব্যথা হতে পারে । তাই তীব্র, দীর্ঘ মেয়াদী সাধারণ চিকিৎসা মাথা ব্যথা না কমলে, বিলম্ব না করে জটিলতা এড়াতে একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।
মাথা ব্যথায় সাধারণ কিছু প্রতিকার
অনেকেই মনে করে থাকেন মাথা ব্যথা সাধারণ সমস্যা । আসলেই কি তাই? মাথা ব্যথা ক্ষেত্র বিশেষ বেশ যন্ত্রণাদায়ক । বিভিন্ন কারনে মাথা ব্যথা হতে পারে । আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা মাথা ব্যথার ঘরোয়া পদ্ধতি জানতে চান । নিচে মাথা ব্যথায় সাধারণ কিছু প্রতিকার দেওয়া হলো —-
প্রতিকার – ১. ধূমপান, মদ্যপান, মাদকসেবন, চা-কফি, রোদ বা অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ থাকা, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, ক্ষুধার্ত থাকাও সময় মতো না খাওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি মাথা ব্যথার প্রধান কারণ । তাই এসব পরিহার করলে মাথা ব্যথা কমে আসবে ।
প্রতিকার – ২. ইতিবাচক জীবন চর্চা, সুনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক বা মানসিক বিশ্রাম, পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন ইত্যাদি মাথা ব্যথার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে ।
প্রতিকার – ৩. হালকা গরম পানিতে গোসল করলে এবং প্রচুর পানি পান করলে মাথা ব্যথা কমে যায় ।
প্রতিকার – ৪. লবঙ্গ গরম করে একটি রুমালে মুড়ে নিয়ে কিছু ক্ষণ ঘ্রাণ নিলে মাথা ব্যথা কম হয় । পুদিনা পাতার সেবন মাথা ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর ।
প্রতিকার – ৫. পরিমাণ মতো আদা ও লেবুর রস এক সাথে মিশিয়ে খেলে বা একটুরা আদা কয়েক চিবিয়ে খেলে মাথা ব্যথা কমে যায় ।
প্রতিকার – ৬. হাসি খুশি মন, টেনশন মুক্ত থাকা, মনকে ইতিবাচক এবং পজিটিভ দিকে ডাইভার্ট করা – মাথা ব্যথা থেকে দূরে রাখে ।
প্রতিকার – ৭. মাথা ব্যথা তীব্র থেকে তীব্র তর হলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।