বগুড়ার শেরপুরে ১৪ মাস বয়সী হুমায়রা খাতুন নামের এক কন্যা শিশুকে পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগে উঠেছে। সংসারে কন্যা সন্তান থাকার পর আবারো স্ত্রীর গর্ভে কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করায় বাবা জাকির হোসেন কন্যা শিশুটিকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন। পুলিশ শিশুর বাবা জাকির হোসেনকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের উচলবাড়িয়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাতে জাকির হোসেন তার ১৪ মাস বয়সী ঘুমন্ত শিশুকে পুকুরে নিক্ষেপ করেন।
জানা গেছে, দিনমজুর জাকির হোসেন সাত বছর আগে নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে রাবেয়াকে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের সংসারে ৬ বছর বয়সী জান্নাতি খাতুন নামের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। রাবেয়া আবারো গর্ভবতী হলে জাকির হোসেন প্রত্যাশা করেন এবার ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। ১৪ মাস আগে রাবেয়া কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এরপর থেকেই স্বামী জাকির হোসেন স্ত্রীর উপর ক্ষুব্ধ হন। কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারনে স্ত্রী রাবেয়াকে দায়ী করে সংসারে অশান্তি শুরু করে। এ নিয়ে তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হয়ে আসছিল।
সোমবার রাতে জাকির হোসেন ঘুমন্ত শিশুকে বিছানা থেকে নিয়ে গিয়ে বাড়ির পার্শ্বে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন। ভোর রাতে রাবেয়া শিশু সন্তানকে না পেয়ে হৈচৈ শুরু করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে জাকির হোসেনকে আটক করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জাকির হোসেন শিশু সন্তানকে পুকুরে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করেন এবং জাকির হোসেনকে গ্রেফতার করেন।
জাকির হোসেনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, গত ৬ মাস আগে তার শ্বাশুড়ি সালেহা বেগম স্বপ্নে দেখেন তার বড় নাতি জান্নাতিকে পুকুরে ফেলে দিলে গুপ্তধন পাবেন। বিষয়টি তিনি ছেলে জাকিরকে জানায়। গত দুই সপ্তাহ আগে জাকিরকেও স্বপ্নে দেখানো হয় তার এক মেয়েকে পুকুরে ফেলে দিলে তাকে গুপ্তধন দেয়া হবে। আর পুকুরে ফেলে দেয়ার আগে পুকুরের পানি পরিষ্কার করে সেখানে মিষ্টি জাতীয় কিছু দিতে হবে। স্বপ্ন দেখার পর জাকির হোসেন কয়েকদিন আগে চুন ছিটিয়ে পুকুরের পানি পরিষ্কার করে সেখানে চিনি এবং মিছরি ছিটিয়ে দেন। কথিত স্বপ্ন দেখে গুপ্ত ধনের আশায় ছোট কন্যা শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দেন।
এ বিষয়ে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, স্বপ্নে দেখা এবং গুপ্তধন পাওয়ার আশা করার ঘটনা ঠিক না। ২য় বার কন্যা সন্তান হওয়ার কারণে জাকিরের মনে অসন্তুষ্টি ছিল। সেখান থেকেই জাকির তার সন্তানকে পুকুরে ফেলে হত্যা করে।