Wednesday , October 16 2024
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে খুব সহজে যাওয়া যায

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে খুব সহজে যাওয়া যায

ইউরোপের ঐতিহাসিক শহর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের অনেক ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে এক স্বপ্নের মতো। একসময় দুর্গম মনে হলেও, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন ইউরোপীয় দেশে বাংলাদেশীরা সহজে যেতে পারেন।

শেনজেন অঞ্চল: এক ভিসায় ২৬টি দেশ

ইউরোপের ২৬টি দেশ নিয়ে গঠিত শেনজেন অঞ্চল বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। শেনজেন ভিসা পেলে এই ২৬টি দেশে মুক্তভাবে ভ্রমণ করা যায়। জনপ্রিয় শেনজেন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

 



  • ফ্রান্স: রোমান্টিক প্যারিস, আইফেল টাওয়ার, লুভর জাদুঘরসহ ফ্রান্সের অনেক কিছুই দেখার আছে।
  • জার্মানি: বার্লিন, মিউনিখ, এবং অন্যান্য শহরগুলোতে জার্মানির সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী হওয়া যায়।
  • ইতালি: রোম, ভেনিস, ফ্লোরেন্সের মতো শহরগুলোতে ইতালির শিল্প, স্থাপত্য, এবং রন্ধনশৈলীর অপূর্ব সমাহার দেখা যায়।
  • স্পেন: বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, এবং অন্যান্য শহরগুলোতে স্পেনের স্থাপত্য, শিল্পকলা, এবং উৎসবগুলো উপভোগ করা যায়।
  • নেদারল্যান্ডস: আমস্টারডামের খাল, টিউলিপ বাগান, এবং জাদুঘরগুলোতে নেদারল্যান্ডসের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

শেনজেন অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো সম্পর্কেও জেনে নেওয়া যাক:

  • গ্রিস: এথেন্সের প্রাচীন স্থাপত্য, সান্তোরিনি দ্বীপের নীল-সাদা ঘরবাড়ি, এবং সুস্বাদু গ্রিক খাবারের জন্য গ্রিস বিখ্যাত।
  • পর্তুগাল: লিসবনের ঐতিহাসিক শহর, সুন্দর সমুদ্র সৈকত, এবং পোর্ট ওয়াইনের জন্য পর্তুগাল পরিচিত।
  • বেলজিয়াম: ব্রাসেলসের গ্র্যান্ড প্লেস, চকলেট, এবং ওয়াফেলসের জন্য বেলজিয়াম জনপ্রিয়।
  • অস্ট্রিয়া: ভিয়েনার সুন্দর প্রাসাদ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, এবং কফি হাউস সংস্কৃতির জন্য অস্ট্রিয়া পরিচিত।
  • সুইজারল্যান্ড: আল্পস পর্বতমালা, সুন্দর হ্রদ, এবং চকলেটের জন্য সুইজারল্যান্ড বিখ্যাত।
  • সুইডেন: স্টকহোমের সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর আলো, এবং আধুনিক নকশার জন্য সুইডেন পরিচিত।
  • ডেনমার্ক: কোপেনহেগেনের রঙিন ঘরবাড়ি, টিভোলি গার্ডেন, এবং লেগোল্যান্ডের জন্য ডেনমার্ক জনপ্রিয়।
  • ফিনল্যান্ড: হেলসিঙ্কির স্থাপত্য, সৌনা সংস্কৃতি, এবং উত্তর আলোর জন্য ফিনল্যান্ড পরিচিত।
  • নরওয়ে: অসলোর সুন্দর ফজর্ড, হাইকিং ট্রেইল, এবং মধ্যরাতের সূর্যের জন্য নরওয়ে বিখ্যাত।
  • আইসল্যান্ড: রিকজাভিকের অদ্ভুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, গ্লেসিয়ার, এবং উত্তর আলোর জন্য আইসল্যান্ড পরিচিত।
  • চেক প্রজাতন্ত্র: প্রাগের ঐতিহাসিক শহর, সুন্দর দুর্গ, এবং সস্তা বিয়ারের জন্য চেক প্রজাতন্ত্র জনপ্রিয়।
  • হাঙ্গেরি: বুদাপেস্টের সুন্দর স্থাপত্য, থার্মাল বাথ, এবং গৌলাশের জন্য হাঙ্গেরি পরিচিত।
  • পোল্যান্ড: ক্রাকোভের ঐতিহাসিক শহর, ওয়ারশের আধুনিকতা, এবং পিরোগির জন্য পোল্যান্ড বিখ্যাত।

এই তালিকায় শেনজেন অঞ্চলের সকল দেশ অন্তর্ভুক্ত নয়।

 

 

শেনজেন-বহির্ভূত ইউরোপীয় দেশসমূহ

শেনজেন অঞ্চলের বাইরেও বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশীরা যেতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • যুক্তরাজ্য: লন্ডন, বিগ বেন, বাকিংহাম প্রাসাদসহ যুক্তরাজ্যের অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে।
  • আয়ারল্যান্ড: ডাবলিনের সবুজ প্রকৃতি, দুর্গ, এবং সাহিত্যের জন্য আয়ারল্যান্ড পরিচিত।
  • তুরস্ক: ইস্তাম্বুলের মসজিদ, প্রাসাদ, এবং বাজারগুলোতে তুরস্কের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষী হওয়া যায়।

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম

১. ভিসার ধরন নির্বাচন:

  • শেনজেন ভিসা: শেনজেন অঞ্চলের ২৬টি দেশে ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য।
  • জাতীয় ভিসা: শেনজেন-বহির্ভূত দেশগুলোর জন্য (যেমন যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড) প্রযোজ্য।
  • ভিসার উদ্দেশ্য: ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার ধরন নির্বাচন করতে হবে (যেমন পর্যটন, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি)।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • পাসপোর্ট: কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট।
  • ভিসা আবেদনপত্র: সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদনপত্র।
  • ছবি: সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ভ্রমণ পরিকল্পনা: ফ্লাইট, হোটেল বুকিং, ভ্রমণের সময়সূচী ইত্যাদি।
  • আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়কর রিটার্ন, সম্পত্তির কাগজপত্র ইত্যাদি।
  • বীমা: ভ্রমণ বীমা।
  • অন্যান্য: আমন্ত্রণপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়), চাকরির ছুটির অনুমতিপত্র, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশিকা পত্র ইত্যাদি।

৩. ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া:

  • অনলাইনে আবেদন: অধিকাংশ দেশের জন্য অনলাইনে ভিসা আবেদন করা যায়।
  • ভিসা আবেদন কেন্দ্র: কিছু দেশের জন্য নির্দিষ্ট ভিসা আবেদন কেন্দ্রে যেতে হয়।
  • আবেদন ফি: ভিসা আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়।

৪. ভিসা সাক্ষাৎকার:

  • কিছু দেশের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকার প্রয়োজন হতে পারে।
  • সাক্ষাৎকারের সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্য, আর্থিক স্বচ্ছলতা, এবং দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে।

৫. ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সময়:

  • ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় দেশভেদে এবং আবেদনের ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
  • সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

৬. ভ্রমণের প্রস্তুতি:

  • ভিসা পাওয়ার পর ফ্লাইট ও হোটেল বুকিং নিশ্চিত করুন।
  • ভ্রমণ বীমা কিনুন।
  • প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করুন।
  • গন্তব্য দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি, এবং নিয়মকানুন সম্পর্কে জেনে নিন।

৭. অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়:

  • কোভিড-১৯: গন্তব্য দেশের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সর্বশেষ ভ্রমণ নির্দেশিকা সম্পর্কে জেনে নিন।
  • ভ্রমণ সতর্কতা: গন্তব্য দেশের সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।
  • মুদ্রা বিনিময়: ভ্রমণের আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থানীয় মুদ্রা বিনিময় করে নিন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভিসা নিয়ম ও প্রক্রিয়া সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য গন্তব্য দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইট দেখুন বা তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

 

 

আরো জানুন: স্মার্টফোনে স্টোরেজ খালি করবেন যেভাবে

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার জন্য প্রধানত দুটি উপায় রয়েছে:

১. বিমানপথ:

  • এটি সবচেয়ে দ্রুত এবং সুবিধাজনক উপায়।
  • বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের প্রায় সকল প্রধান শহরে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়।
  • বিভিন্ন বিমান সংস্থা যেমন এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ইত্যাদি এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
  • ফ্লাইটের সময়কাল গন্তব্যস্থল এবং সংযোগ ফ্লাইটের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

২. স্থলপথ ও জলপথ:

  • এটি সময়সাপেক্ষ এবং কিছুটা জটিল হতে পারে।
  • বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ভারত হয়ে ইউরোপ যাওয়া যায়। তবে এটি বেশ দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর হতে পারে।
  • জলপথে সাধারণত পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়:

  • ভিসা: ইউরোপ ভ্রমণের জন্য অবশ্যই আপনার কাছে প্রযোজ্য ভিসা থাকতে হবে। ভিসার ধরন আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং গন্তব্যস্থলের উপর নির্ভর করবে।
  • পাসপোর্ট: আপনার কাছে একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে যার মেয়াদ আপনার ভ্রমণের সময়কালের পরেও কমপক্ষে ৬ মাস থাকবে।
  • টিকিট ও থাকার ব্যবস্থা: আপনার ভ্রমণের জন্য আগে থেকেই ফ্লাইট টিকিট এবং থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।
  • ভ্রমণ বীমা: যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য ভ্রমণ বীমা কেনা উচিত।
  • কোভিড-১৯: গন্তব্য দেশের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সর্বশেষ ভ্রমণ নির্দেশিকা সম্পর্কে জেনে নিন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।
  • অর্থ: আপনার ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ এবং প্রয়োজনীয় ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড সাথে রাখুন।

উপসংহার

 

 

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ভ্রমণ এখন আর শুধু স্বপ্ন নয়। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে আপনিও ইউরোপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। ভ্রমণের আগে ভিসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে নিন। শুভ ভ্রমণ!

বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে খুব সহজে যাওয়া যায

About admin

Check Also

জীবনের শুরুতে ব্যর্থ ছিলেন বিখ্যাত যেসব ব্যাক্তি

বিশ্ববিখ্যাত অনেক ব্যক্তি তাঁদের প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ অনেকেই হয়েছেন তীব্র বঞ্চনার শিকার। কিন্তু তাঁরা …