গত ১২ জুলাই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি প্রকাশের ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এমনই এক ছবিতে রহস্যময় কিছুর দেখা পেয়েছেন জার্মানিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান স্পেস অবজারভেশন সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী কায় নোয়েস্কে।
পাঁচটি ছায়াপথের গ্রুপ স্টেফানস কোয়েনট্যাটের ঐ ছবি দেখে নোয়েস্কে বলেন, সেখানে এমন কিছু আছে যার সম্পর্কে আমরা জানি না… এর মধ্যে একটি ডার্ক ম্যাটার হতে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ উপাদান হয়ত ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি। যদিও বিজ্ঞানীরা ডার্ক ম্যাটার যে আসলে কী, সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি। এমনকি এখনও পর্যন্ত ডার্ক ম্যাটার খুঁজে পাওয়া যায়নি। দৃশ্যমান আলো, এক্সরে কিংবা বেতার তরঙ্গের মতো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফোর্সের সঙ্গে ডার্ক ম্যাটারের সংযোগ না ঘটায় ডার্ক ম্যাটারকে এখনও দেখা কিংবা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান বিজ্ঞানীরা।
তবে ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় বলের কারণে এর প্রভাব সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় বলে জানান তারা। ডার্ক ম্যাটারের খোঁজে সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ বা সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বা এলএইচসির বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা হচ্ছে এলএইচসি। প্রায় এক দশক আগে এলএইচসি দিয়ে হিগস বোসন পার্টিকল খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এই পার্টিকলের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরে ধারণা করলেও অতীতে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। হিগস বোসন পার্টিকল খুঁজে পাওয়ায় পার্টিকল ফিজিক্সের স্ট্যান্ডার্ড মডেল প্রমাণ করা গেছে।
এলএইচসির বিজ্ঞানী টেভং ইউ মনে করেন, ডার্ক ম্যাটার রহস্যের সমাধান করতে পারে এলএইচসি। যদিও এখনও তার ধারণা, ডার্ক ম্যাটার হয়ত স্ট্যান্ডার্ড মডেলে যে মৌলিক কণাগুলোর কথা বলা আছে, সেগুলোর মতোই হতে পারে। এলএইচসিতে যেভাবে ডার্ক ম্যাটার পাওয়া যেতে পারে দুটি আপেলের মধ্যে একসঙ্গে জোরে সংঘর্ষ লাগালে আপেল দুটো ভেঙে সেগুলোর টুকরো আশেপাশের দেয়ালে লেগে যায়। পরে সেই টুকরোগুলো জড়ো করে হয়ত (তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব) আবারও দুটো আপেল বানানো সম্ভব।
এমন উপায় ব্যবহার করেই এলএইচসিতে নতুন কণা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কোলাইডারে মৌলিক কণা চূর্ণবিচূর্ণ করার পর সেগুলো ডিটেক্টরে আটকে যায়। পরে সেগুলো জোগাড় করে একত্র করার চেষ্টা করা হয়। এই সময় যদি দেখা যায়, কিছু এনার্জি হারিয়ে গেছে তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে, ঐ এনার্জি ডার্ক ম্যাটারে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। অবশ্য কিছু বিজ্ঞানী এখনও মনে করেন ডার্ক ম্যাটার যদি আসলেই থাকতো তাহলে এতদিনে তা খুঁজে পাওয়া যেত।