যেমন সম্পর্কই হোক না কেন, প্রত্যেক সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ধরে কাছে থাকা বা পাশে থাকাটাই শেষ কথা নয়। যে সময়টুকু আপনি কাটাচ্ছেন কাছের মানুষের সঙ্গে, সেটি যেন হয় নিখাদ ও আন্তরিক। নইলে, বিন্দু বিন্দু জল হয়ে সাগরে পরিণত হতে পারে মনোমালিন্য। তাই কোয়ালিটি টাইম কাটানো সম্পর্কের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে।
কোয়ালিটি টাইম কী
অনেকের কাছে শোনা যায়, রান্না করতে করতে, টিভি দেখতে দেখতে বা ল্যাপটপে কাজের ফাঁকে তো কথাবার্তা বলি। সময় দিই, তারপরও সময় দিই না বলে অভিযোগ শুনতে হয়। আসলে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দেওয়া ও ‘অনেকটা সময়’ দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। কোয়ালিটি টাইম হলো সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রতি নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনোযোগ দিয়ে তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু সময় কাটানো। কোয়ালিটি টাইম খুব স্বল্প সময়ের হলেও মানুষের মনোযোগের চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে, যা কিনা সারা দিন স্বাভাবিক সময় দিলেও পূরণ হতে চায় না। এককথায়, মনোযোগে বিভক্তি নিয়ে আমরা পরিবারে সময় দিই যেটা ঠিক কাজ নয়। কিন্তু কোয়ালিটি টাইমে শতভাগ মনোযোগ শুধু পরিবার বা সন্তানদের দিতে হয়।
কর্মজীবী মা ও একক পরিবারের শিশুদের জন্য এটি খুব প্রয়োজনীয়। শিশুদের নানা রকম আচরণগত যে সমস্যাগুলো হয়, তা তাদের মনোযোগের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। কোয়ালিটি টাইম দিলে শিশুদের মধ্যে মনোযোগের চাহিদা অনেকখানি পূরণ হয়ে নেতিবাচক আচরণ করার প্রবণতা কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের বন্ধন অনেক দৃঢ় হয় এবং সেই সঙ্গে শিশুদের রাগ, জেদ, অন্যায় আবদার ইত্যাদির পরিমাণও অনেক সময় বেশ কমে যায়। এর ফলে মায়ের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কোনো নেতিবাচক আচরণ থেকে বিরত থাকে। বাবার ক্ষেত্রেও এটি সমান প্রযোজ্য।
- স্বামী ও সন্তানদের সময় দেওয়ার সময় অন্য কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। টিভি দেখা, ল্যাপটপ বা মোবাইলে কোনো কাজ করা বা অফিসের কোনো কাজ যেন আপনার সময়টাকে নষ্ট না করে।
- সন্তানদের পড়াশোনা, বন্ধুবান্ধবের খোঁজ নেবেন। সন্তান কিশোর বয়সী হলে বেশি বেশি উপদেশ দেওয়া থেকে তাদের কথার ওপর মনোযোগী হন। এমন একটি আবহ তৈরি করবেন, যেন সে নির্ভয়ে ও বিশ্বাসের সঙ্গে মনের কথা বলে।
- শিশুদের সঙ্গে তাদের মতো করেই কিছুক্ষণ খেলুন কিংবা মজার মজার গল্প বলুন। মনে রাখবেন, আপনার শিশুটি অনেক কিছু বোঝে। সামান্যতম মনোযোগের বণ্টন তার চোখ এড়ায় না। তাই তাদের প্রতি শতভাগ মনোযোগ নিশ্চিত করুন।
- সারা সপ্তাহ যতই কাজ করুন, ছুটির দিনটি পরিবারের জন্য রাখুন।
- আগেই সবাই মিলে পরিকল্পনা করুন দিনটিকে সুন্দর করে কাটানোর।
- অনেকটা সময় কাছে না থাকার পরেও যেটুকু সময় দিচ্ছেন সেটি যেন অর্থবহ হয়।